সাগর-রুনি হত্যা মামলা:ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার তথ্য হাইকোর্টে

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে ফের জটিলতা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টকে জানিয়েছে, মামলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে। এই তথ্য মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল ২০২৫) সকালে হাইকোর্টকে অবহিত করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম আরসাদুর রউফ।
তিনি আদালতকে জানান, মামলার তদন্ত কাজ চলছে, তবে তা শেষ করতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষ ৯ মাস সময় চাইলেও হাইকোর্ট আগামী ২২ অক্টোবর ২০২৫ এর মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন
টাস্কফোর্স গঠন ও র্যাবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি
এর আগে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, হাইকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ আদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-কে মামলার তদন্ত থেকে সরিয়ে দেয়। আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উচ্চ পর্যায়ের চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন এবং ৬ এপ্রিল ২০২৫ এর মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে এই নির্দেশনা অনুযায়ী একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। এর আহ্বায়ক করা হয়:
-
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি), এবং
-
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন:
-
পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডি থেকে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার দুইজন,
-
র্যাব থেকে একজন পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
তবে ৬ এপ্রিল আদালতে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় এ সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানানো হয়।

প্রত্যয় উত্তরখান মডেল টাউন
ঘটনার পটভূমি
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি:
-
সাগর সারওয়ার, বার্তা সম্পাদক, মাছরাঙা টেলিভিশন
-
মেহেরুন রুনি, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এটিএন বাংলা।
পরদিন সকালে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ১২ ফেব্রুয়ারি, নিহত রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রথমে তদন্ত করে থানার এক কর্মকর্তা। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটি হস্তান্তর হয় ডিবির পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের কাছে। মাত্র দুই মাস পর হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় র্যাব-এর হাতে।
র্যাব তদন্ত শুরু করলেও, বিগত ১৩ বছরেও তারা কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। ফলে মামলাটি কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
আইনি অগ্রগতি ও রিট পিটিশন
এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১২ সালে একটি জনস্বার্থে রিট দায়ের করে। হাইকোর্ট ২৮ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করে জানতে চায়—কেন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে না।
২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, মামলার বাদী পক্ষ আইনজীবী হিসেবে শিশির মনিরকে নিযুক্ত করে।
এই মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও তদন্তে বারবার প্রতিবন্ধকতা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষত, প্রমাণপত্র নষ্ট হওয়া এবং তদন্তকারী সংস্থার ব্যর্থতা বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করেছে। হাইকোর্টের সর্বশেষ সময়সীমা অনুসারে ২২ অক্টোবর ২০২৫ এর মধ্যেই নতুন গঠিত টাস্কফোর্সকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হবে।