ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা সংগঠিত করেছে-ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সারাদেশের সব মহানগরী ও জেলা আমীরদের নিয়ে আজকে আমরা একত্রে বসতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। এমনভাবে বসা, গত ১৫ বছরে পারিনি।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে সারাদেশের সকল জেলা ও মহানগর আমীরদের নিয়ে দুদিন ব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীরে জামায়াত বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা সংগঠিত করেছে। এই গণহত্যার প্রথমটা বিডিআরের ঘটনায় ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারকে আমরা হারিয়েছি। দ্বিতীয়টি ৫ই মে হেফাজতের সমাবেশে ও সবশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যা সংগঠিত করেছে তারা। এর বাইরেও গুম-খুনের মাধ্যমে অগণিত মানুষ চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। যাদের ভাগ্য ভালো তাঁরা ফিরে এসেছে। অসংখ্য মানুষকে একযুগ ধরে তাদের কর্মস্থল থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের পেঠে লাথি মারা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর দল হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব ছিল শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। আমরা প্রায় সকল শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। আমরা কৃতজ্ঞ তাঁরা আমাদের এই সহযোগিতা গ্রহণ করেছেন।
এরপরে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল আহত এবং পঙ্গুদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন কাজ ছিল। আমাদের হিসেবে ২৪ হাজারের বেশী আহত। যা এখনও চলমান। এরপরে আসলো বৃহত্তর নোয়াখালী এবং কুমিল্লার বন্যা। আমরা সাথে সাথেই চেষ্টা করেছি বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই আমরা যেকোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এদেশ আমাদের সকলের। দেশে যদি অস্থিরতা বিরাজ করে, সবাই মুখ থুবড়ে পড়বো। আমরা বিশৃঙ্খলা পছন্দ করি না। জামায়াতের দায় এক্ষেত্রে অনেক বেশী। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পরে দেশে ৪ দিন কার্যত কোন সরকার ছিল না। সেসময়ও আমরা আমাদের সেচ্ছাসেবক দিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছি। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আলহামদুলিল্লাহ বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, যে সরকার গঠিত হয়েছে জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে তাকে আমরা সমর্থন করছি এবং করবো। তবে আমরা বিনাশর্তে সমর্থন দিচ্ছি না। জাতির মনে আস্থা তৈরীর জন্য দৃশ্যমান বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এদের বিচার হয়, আগামী নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহারের দু:সাহস কেউ দেখাবে না। এ জাতি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশমালা আমরা কমিশনের কাছে দিয়েছি। আমরা যত বেশি সহযোগিতা করবো, সরকার তত সফল হবে। তবে সরকারের কোন কোন উপদেষ্টার কারণে মাঝে মাঝেই বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমাদের স্পষ্ট কথা হলো, রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইলে ওখান থেকে বের হয়ে দেন।
জামায়াত প্রধান বলেন, পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ কাউকে ছোট দল বলার সাহস পাবে না। যে দল যে পরিমাণ ভোট পাবে সেই আলোকে আনুপাতিক হারে আসন পাবেন। যারা এর সুফল পেয়েছে তারা আর এটি বাদ দেয়নি। বিশ্বের ৬২টি দেশ এটি অনুসরণ করেও বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অতি সম্প্রতি নারী সংস্কার কমিটি একটি সুপারিশমালা দিয়েছেন। যা এক কথায় অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি।
নির্বাচন যথাসময়ে হতে হবে। সরকারের প্রধান বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মাঝামাঝি নির্বাচন হবে। এজন্য দু’টি সময়কে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। একটা ফেব্রুয়ারিতে, রমজানের আগে। আর যদি কোন কারণে দৃশ্যমান বিচারে বা সংস্কারে দেরি হয়, তবে কোনভাবেই যেন এপ্রিল পার না হয়।
জাতীয় স্বার্থে আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সহকর্মীদের সামাল দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোন কোন দল সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে।
দখলবাজি-চাঁদাবাজি এ সমস্ত কাজ যারাই করবে, তারা মানুষের ঘৃনা কুড়াবে। আমার কাজের জন্য দেশের যেন ক্ষতি না হয়।
গাজাসহ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোতে যেখানেই মানুষের উপর নির্যাতন হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানাই। গায়ের জোরের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য আহবান জানাই।
আমরা দেশবাসীর কাছে দু’আ চাই। আমরা মজলুম দল। সবচেয়ে বেশী জুলুমের শিকার আমরা। বাংলাদেশ একটি ভুক্তভোগী রাষ্ট্র। স্বাধীনতার পর থেকে লুন্ঠিত সব সম্পদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তা ফেরত চাই। একটি হিসাব মতে বাংলাদেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।