জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু আজ

রাজনীতি
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আজ সোমবার (২ জুন ২০২৫) থেকে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল চারটায় ঢাকার বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এই আলোচনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
কমিশন সূত্র জানায়, আজকের উদ্বোধনী সভার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক বৈঠক শুরু হবে। এই আলোচনা ঈদুল আজহার আগে এক দিন ও পরে ধারাবাহিকভাবে চলবে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুগুলো নিয়ে গভীর আলোচনা হবে।
আলোচনা ঘিরে কমিশনের লক্ষ্য: জুলাই সনদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে এই দ্বিতীয় দফার আলোচনা শেষে আগামী জুলাই মাসে একটি সমঝোতামূলক দলিল—‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করা, যা রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে গৃহীত সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি হবে।
সংস্কারের পটভূমি
গত বছরের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে:
১.সংবিধান সংস্কার কমিশন
২.নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
৩. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
৪. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
৫. দুর্নীতি দমন কমিশন
৬.পুলিশ সংস্কার কমিশন
এই কমিশনগুলো ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে, যাতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
প্রথম পর্বের আলোচনা ও অগ্রগতি
কমিশনের প্রথম পর্বের আলোচনার সারসংক্ষেপ গত ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখনো ঐকমত্য হয়নি।
এই অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ
- জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (NCC) গঠন
- একই ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন
- সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন
- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া
- সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি
কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো এসব বিষয়ে আরও আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, সংস্কারপ্রক্রিয়ায় যুক্ত সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফার আলোচনা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে এক নতুন মোড় দেবে এবং একটি টেকসই ও গণতান্ত্রিক সংস্কাররূপরেখা তৈরি হবে।এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে দেশ-বিদেশে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে গভীর আগ্রহ দেখা দিয়েছে, কারণ এর ফলাফল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সংবিধানিক কাঠামো ও শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।