রপ্তানিতে বাধা নয় ট্রাম্পের শুল্ক, এপ্রিলেও প্রবৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক
বাণিজ্য
আন্তর্জাতিক ডেস্ক , প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ০৯: ৫০
নির্বাচনী বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যনীতি কঠোর হয়ে উঠলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সেখানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক (reciprocal tariff) আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির বাজারে বাংলাদেশের পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে বাস্তবতা উল্টো। চলতি বছরের প্রথম চার মাস—জানুয়ারি থেকে এপ্রিল—পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারকের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯.৩৪ শতাংশ বেশি। মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে ৮০ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ৭০ কোটি, মার্চে ৭২ কোটি এবং এপ্রিল মাসে ৭৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, বহিরাগত শুল্ক চাপ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে পাঁচটি দেশ থেকে—ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (OTEXA)-এর তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ২,৬২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৭ শতাংশ বেশি।
তবে এই বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগীদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। চীন দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ রপ্তানিকারক থাকলেও এখন স্থানটি দখল করেছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম এ সময়ে ৫০৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চীন রপ্তানি করেছে ৪৩৬ কোটি ডলার, যার প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.৬ শতাংশ। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চীনের বাজার শেয়ার কমতে শুরু করেছে।
ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানিকারক। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তারা ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ১৬০ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের তুলনায় ১৫.৬১ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি উৎসাহব্যঞ্জক হলেও উদ্যোক্তাদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ বিরাজ করছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর থাকায় কিছু মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই বাড়তি ব্যয় রপ্তানিকারকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শুল্কের অর্ধেক কিংবা পুরোটা কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের লাভের মার্জিন কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ রাতের মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাবে-আসিফ মাহমুদ
এদিকে ভিয়েতনাম ও ভারত ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক হ্রাস বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে এবং অনেকাংশে অগ্রগতিও করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব দেশ শিগগিরই মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। এতে তারা আরও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে। বিপরীতে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনও এমন কোনো দৃশ্যমান কূটনৈতিক উদ্যোগ বা আলোচনা হয়নি, যা এ ক্ষেত্রে একটি দুর্বলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আপাত সাফল্য থাকলেও ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর কৌশলগত অগ্রগতির কারণে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য দ্রুত কার্যকর কূটনৈতিক আলোচনায় যাওয়ার এবং বিকল্প বাজার সম্প্রসারণের কৌশল নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।