সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে- প্রধানমন্ত্রী
বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর কাছে এটুকু বলবো যে যারা অপরাধী তাদের খুঁজে করে দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ বর্বরতার বিরুদ্ধে, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে।
মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধে সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (জুলাই ২৬) বিকেলে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি আবারও বলবো, দেশবাসীকে বলবো যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে খুঁজে বের করা। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যেন আর কখনো এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। যেটা আমি কখনো চাইনি। কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে এটা কখনও চাইনি। আজকে বাংলাদেশে সেটাই করলো।
সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত।
তিনি বলেন, এতগুলো মানুষ, আমি তো আমার সব হারিয়েছি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষের হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।
জামায়াত-শিবির, বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল তারাই এ সুযোগ নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দেশব্যাপী এ ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই, দেশের প্রতি কোনো মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। আর মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।
তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন এতে অর্জনটা কি হলো। কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেলো। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, সেই ৭১ সালের কথা মনে পড়ে, ২০১৩ তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা, আবার ২০১৪ তে সেই একই। ২০২৩ এর ২৮ অক্টোবর, পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবারো সেই পুলিশকে মারা না শুধু, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। আওয়ামী লীগের (কর্মী) গাজীপুরের, তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা। একি বর্বরতা, একি জঘন্য। কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করবো এ যে বর্বরতা, এ যে সন্ত্রাস জঙ্গি এবং মানুষকে হত্যা, এটাতো সম্পূর্ণ জঙ্গি কাজ। মানুষের হাত কাটা, পা কাটা, রগ কাটা, চট্টগ্রামে আমাদের ছাত্র লীগের ছেলেদের ৬ তলা থেকে ফেলে দেওয়া, তাদের রগ কেটে দেওয়া। পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের বর্বরতা।
আহতদের চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হয়নি হয়নি এবং তাদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, (আহতদের) চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয় রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দর ভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সেবা করার যা যা সবই নষ্ট করবে, সবই ধ্বংস করে দিবে, সবই পোড়াবে।
তিনি বলেন, কত বার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সব কিছু ভুলে, সেই শোক, ব্যথা, বেদনা, বাবা-মা, ভাই সব হারানোর বেদনা, নিজের ওপর এত বড় আঘাত, সব কিছু মোকাবিলা করে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু সেখানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিচ্ছু হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আর হাসপাতালে আক্রমণ, কোভিড হাসপাতাল ছিল সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা যেখানে মানুষের সেবা সেখানে আঘাত হানা, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হয় না।
সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন। সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে বলবো আপনারা দোয়া করেন। যেন এ জঙ্গিবাদ এবং জুলুম এর হাত থেকে মানুষ যেন মুক্তি পায়। মানুষের জীবনে শান্তি আসে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের খোঁজখবর নেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।