অর্থনীতি পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র ছিল-শেখ হাসিনা
অর্থনীতি পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র ছিল বলে মন্তব্য করেছেন-শেখ হাসিনা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সংঘাতময় পরিস্থিতির পেছনে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাম্প্রতিক সংঘাতে আহতদের দেখতে শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-নিটর (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিদর্শন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই, অপরাধটা কী করেছি? যেখানে আমি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি, মানুষের জীবন মান উন্নয়ন করেছি, আজকে ২০০৮ সালের বাংলাদেশ আর ২০২৪ এর বাংলাদেশ তো এক না। বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান তো উন্নত হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি আজকে কত উপরে উঠে গিয়েছিল। ’
তিনি বলেন, ‘মনে হলো এটা আর কিছু না। আমাদের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতি করে দেওয়া। এটাই বোধ হয় এদের পেছনে ষড়যন্ত্র। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে আসলাম, আজকে সেখানে দেখি, আজকে একদিকে জ্বালাও-পোড়াও সব কিছু, ঠিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে সেবা দেয় সেখানে। ’
জনগণের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে মেট্রোরেলে মানুষ কত অল্প সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারতো, আবার ফিরতে পারতো। সেই স্টেশনগুলো পুড়িয়ে এখন ট্রাফিক জ্যাম, মানুষের কষ্ট। আমি তো কষ্ট লাঘব করেছি। কিন্তু যারা এভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে আবার কষ্টে ফেলে দিলো তাদের বিচার এদেশের মানুষকেই করতে হবে। আমি খালি সবার সহযোগিতা চাই। ’
তিনি বলেন, ‘আমার কি এটাই অপরাধ যে আমি মানুষের জীবন মান উন্নত করার জন্য কাজ করেছি। আর সেই জায়গাগুলোতেই হামলা করতে হবে। ’
জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির দায় কার?
সাম্প্রতিক সংঘাতে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব কার এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা তো আমি বাতিলই করে দিয়েছি। আমি আহ্বান করেছিলাম একটু ধৈর্য ধরো। হাইকোর্টে শুনানি হবে, হাইকোর্ট যে রায় দেয়। না তারপরও এই আন্দোলন, আজকে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলো, এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হলো। এর দায়দায়িত্ব কাদের?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাবো। এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ, এদেশকে নিয়ে যেন আর কেউ চালাতে না পারে। আমি সবার সাহায্য চাই। ’
‘চাই না এভাবে কোনো মায়ের কোল খালি হোক’
সাম্প্রতিক সংঘাতে যারা মারা গেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর এভাবে মায়ের কোল খালি হোক এটা আমি চাই না। কারণ আমি তো বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি হারাবার ব্যথা কত কষ্টের। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘(স্বজন হারানোর) কষ্ট বুকে নিয়েই তো ফিরে এসেছি এদেশের মানুষের জন্য। এখানে আমার তো কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো ছেলে-মেয়ের জন্যও কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া, নিজেরাই চাকরি করেছে, নিজেরাই লেখাপড়া করেছে, আমি কতটুকু করতে পেরেছি। কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি। ’
তিনি বলেন, ‘আজকে অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান। সবই তো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি তখনই এই তাণ্ডব করে যে জায়গাগুলোতে মানুষের সেবা সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত। ’
আহতদের চিকিৎসায় সব করবে সরকার
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আহত তাদের সবার চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে আমরা করে দেবো, করে দিচ্ছি। ’
যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছে তাদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা পা হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে, আমরা কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দেবো। যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মতো চলতে পারে, নিজের কাজ করতে পারে। ’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চলমান কর্মসূচির সমালোচনা
বিভিন্ন দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউন আর তার ফলাফল আজকের এই অবস্থা। সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আর সেই শাটডাউন শেষ হয় না। কী কারণে আমি বুঝি না। আমরা তো সম্পূর্ণ দাবিই মেনে নিয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘একটা মানলে আরেকটা, আরেকটা মানলে আরও একটা। এর ফল আজকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সব দিকে চারখার। আর আজকে কত মানুষ জীবন হারালো। কত মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। ’
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটও এ রকম তাণ্ডব চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী্।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সংঘাতে গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
আহতদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
নিটর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন, দুর্যোগ ভবন এবং এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা পরিদর্শন করেন।
এর আগে গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সংঘাতে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তার আগে শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন পরিদর্শন করেন এবং বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে কয়েকদিন প্রাণঘাতী সংঘাত হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এ সংঘাত হয়।