মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

কোটা আন্দোলনে অর্থের যোগান দেয় নূর

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৬ সময়
আপডেট: সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের অত্যন্ত সুকৌশলে পরিচালিত করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর।কোটা আন্দোলনে অর্থের যোগান দেয় নূর।

আড়ালে থেকে তিনিই সব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন। কোটা আন্দোলনে উসকানি দিয়েছেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে নূরকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাকে এই আন্দোলনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলে তিনি এসব তথ্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেন।

ডিবির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা রয়েছে নূরের। এই আন্দোলনে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার বড় একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। পরে তিনি একটি রাজনৈতিক দলও খোলেন। এবারের এই কোটা আন্দোলনে পেছন থেকে সমন্বয়কারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, কোটা আন্দোলন সফল করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দেশে এনেছিলেন। এই টাকার একটি অংশ প্রায় ৬৫ লাখ টাকা তিনি ঢাকার তিন অঞ্চল বাড্ডা, মিরপুর ও লালবাগে গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের দিয়েছিলেন। যাতে তারা কোটা আন্দোলনের বিভিন্ন রসদ আন্দোলনকারীদের পাঠান। নূরের মামলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১৮ জুলাই রাজধানীর সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় নুরুল হক নূরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। আদালতে নূরের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনার মামলায় রবিবার (২৮ জুলাই) পুলিশ নুরুল হক নূরকে আদালতে হাজির করলে আদালত আবারও তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, কোটা আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একটি বাসা থেকে নুরুল হক নূরকে আটক করে ডিবি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নূর বিভিন্ন স্থানে টাকা লেনদেন করেছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনব। ’

নূরের মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে যে মোটা অঙ্কের টাকা এসেছে তার বড় অংশ নিজের পকেটে রেখেছেন নূর। এর একটি অংশ ৬৫ লাখ টাকা বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছেন। এই টাকা দিয়ে সহিংসতাকারীদের পানি, বিরিয়ানি, কাপড়ের জুতা সরবরাহ করা হয়েছিল। এছাড়া ওই টাকা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে লোক ভাড়া করে পুলিশের সঙ্গে সহিংসতা করার জন্য আনা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুরু থেকেই এই কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন নূর। প্রত্যেক দিন রাতে ঢাকার রামপুরার একটি বাসায় কোটা সমন্বয়কারীদের সঙ্গে নূরের বৈঠক হয়েছে। কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ও সারজিস আলমের সঙ্গে নূরের মোবাইল ফোনে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে অন্যদের সঙ্গে ফোনে তিনি কথা বলেছেন। নাহিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ না করার কারণ হিসেবে তিনি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে দুইজনের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেননি।

সূত্র জানায়, কোটা আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থাকুক- এই জন্য তিনি আড়ালে থেকেই সমন্বয়কারীদের পরিচালনা করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কোটা আন্দোলনের যে বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সমন্বয়কারীরা তার সঙ্গে পরামর্শ করেই দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কোনো কর্মসূচি না দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে কর্মসূচি দিয়ে সবার নজর কাড়ানোর পরিকল্পনাও তাদের সফল হয়েছে বলে নূর দাবি করেছেন।

সূত্র জানায়, নূর শুরুতে এই আন্দোলনে কোনো দলকে সম্পৃক্ত না করার জন্য কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি সমন্বয়কারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে আন্দোলন যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে যাবে, তখন তার দলসহ অন্যান্য বিরোধী দলকে সম্পৃক্ত করা হবে। এই দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে বিরোধী দলের এক ঊর্ধ্বতন নেতার উত্তরার বাসায় নূর গত ১৩ জুলাই রাতে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সাম্প্রতিক সহিংসতায় গ্রেফতার হওয়া লক্ষ্মীপুর জেলার এক সাবেক এমপিও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, মেট্রোরেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তারা প্রাথমিক তদন্তে মেট্রোরেলে সহিংসতায় একটি স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজশ পেয়েছেন। প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তদন্তকারীরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর