আশুলিয়ায় শ্রমিক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩০
আশুলিয়ায় বিক্ষোভের জেরে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ৫ টি গাড়ি।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ১১ টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকার মন্ডল গ্রুপের সামনে এঘটনা ঘটে। নিহত ওই শ্রমিকের নাম কাউসার হোসাইন খান (২৭), তিনি আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ম্যাঙ্গো টেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিক।
দুপুর ২টার দিকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলী। প্রাথমিকভাবে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুই জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান। বাকি আহতদের পরিচয় জানা যায় নি। গুলিবিদ্ধ দুই জন পিএমকে ও দুই জনকে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
শ্রমিকরা জানায়, সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সাথে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ত্রী-পক্ষীয় মিটিং চলছিল। এসময় সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে অন্যান্য কারখানার শ্রমিক সেখানে জড়ো হতে থাকে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে শ্রমিকরা র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করেন। পরে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গুলি চালায়। এসময় ত জন গুলিবিদ্ধ হলে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতাল ও সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এসময় এনাম মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক কাউসার হোসাইন খানকে মৃত ঘোষণা করে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। সাভার এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে আনা হয়। এদের মধ্যে কাউসার মারা গেছেন। বাকি দুই জনের চিকিৎসা চলছে। ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক সুমন বলেন, সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিলো। আমাদের কারখানায় কোন ধরনের আন্দোলন হয় নি। তবে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে মন্ডলের সামনে যায়। সেখানে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেয়। এসময় শ্রমিকদের লাঠিচার্জ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে গুলি ছুড়লে ৩ জনের গুলি লাগে। পরে আমি তাদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
এছাড়া প্রায় ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল চিকিৎসা নিচ্ছেন। পিএমকে হাসপাতালের অ্যডমিন ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে ৪ জন শ্রমিককে আহতবস্থায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জনের পায়ে গুলি লেগেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। ন্যাচরাল ডেনিম কারখানার এইচআর অ্যাডমিন সবুজ হাওলাদার বলেন, আমাদের কারখানায় কোন সমস্যা ছিলো না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করছিলো। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে, পাশের মন্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক মারা গেছে। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসাথে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যায়। পরে ওখানে কি ঘটেছে আমার জানা নেই।
এব্যাপারে শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।
===========