সিলেটে চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন পালন

চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে কমপ্লিট শাটডাউন পালন করছেন সিলেটের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তারা কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় নানা ধরনের প্লেকার্ড হাতে বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক ও ছাত্ররা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সরেজমিনে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফটক বন্ধ রেখে প্লেকার্ড হাতে এবং অ্যাপ্রোন পরিহিত অবস্থায় শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি মেম্বার, একাডেমিক, প্রশাসনিক হেড (প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর), ইন্টার্ন, মিড লেভেল চিকিৎসক (সিএ, রেজিস্ট্রার, বেসরকারি এফসিপিএস ট্রেইনি, রেসিডেন্ট, নন রেসিডেন্ট প্রমুখ) থেকে শুরু করে হাসপাতালের সব চিকিৎসক (অধ্যাপক পর্যন্ত) কর্মবিরতিতে অংশ নেন।
এ সময় হাসপাতালের প্রধান ফটক ও আউটডোর চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখেন তারা। এছাড়া সব চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।
এদিকে চিকিৎসকদের আন্দোলনের কারণে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি থাকলেও চিকিৎসা মিলছে না। ইতোমধ্যে চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক থাকা অবস্থায়ও গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জন রোগী মারা গেছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফলে অনেকে রোগী নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে দেখা গেছে।
চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, কমপ্লিট শাটডাউন হলেও হাসপাতালে জরুরি সেবা চালু রাখা হয়েছে। সেখানে প্রতি ইউনিটের একটি করে টিম করা আছে। সেখান থেকে হাসপাতালের অভ্যন্তরে কারও বেশি সমস্যা হলে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আজ দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ২ হাজার ২০০ রোগী ভর্তি রয়েছেন। সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সিলেটের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা জানান, এ যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে তারা একাত্মতা পোষণ করতে গিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলেন, এখানে সুস্পষ্ট পাঁচ দফা দাবি মেডিকেল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের। এ দাবিগুলো সম্পর্কে সবাই জানে। এমবিবিএস এবং বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি লিখতে ও ব্যবহার করতে পারবে না। ২০১০ সালের ২৯ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে করা রিটের প্রত্যাহার এবং এমবিবিএস ও বিডিএস ডাক্তার ছাড়া কেউ প্রেসক্রিপশন করতে পারবে না। এমবিবিএস, বিডিএস চিকিৎসকের পরামর্শপত্র ছাড়া ফার্মেসিগুলো যেন ড্রাগ দিতে না পারে। এছাড়া চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে হবে। দেশে হাজার হাজার এমবিবিএস চিকিৎসক পাস করে বেরোচ্ছেন, শূন্য পদে তাদের কর্মসংস্থান করা।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে-
১. ডাক্তার পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত রিট প্রত্যাহার। মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা, যা ২০১০ সালে গত সরকার দিয়ে গেছে।
২. উন্নত বিশ্বের মান অনুযায়ী ওটিসি ড্রাগ আপডেট করা। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা।
৩. স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসক সংকট নিরসনে দ্রুত শূন্য পদে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ এবং আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠনপূর্বক ষষ্ঠ গ্রেডে চাকরি প্রবেশপথ তৈরি। প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করে চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখা। চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪-এ উন্নীত করা।
৪. বেকার তৈরির কারখানা সব ম্যাটস প্রতিষ্ঠান এবং মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা। তবে এরই মধ্যে শিক্ষাধীন ম্যাটস শিক্ষার্থী এবং ডিএমএফদের প্যারামেডিকস হিসেবে পদায়নের ব্যবস্থা করা।
৫. চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তায় চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়ন করা। এ ক্ষেত্রে দ্রষ্টব্য যে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ডাক্তার সমাজের প্রতিবাদের মুখে সাতদিনের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, যা সাত মাস পেরিয়েও কোনো আলোর মুখ দেখেনি।