বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন

ঈদের আগে বকেয়া বেতন-বোনাস নিয়ে সংকট যেন কাটছেই না

স্টাফ রিপোর্টার, গাজী মোঃ নিয়ামুল ইসলাম / ৯৪ সময়
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও তৈরি পোশাকশিল্পের সব কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। বিশেষ করে কিছু কারখানা এখনও ফেব্রুয়ারির বেতনও পরিশোধ করতে পারেনি, যা শ্রমিক অসন্তোষ বাড়িয়েছে।

বেতন-বোনাস পরিশোধে পিছিয়ে বহু কারখানা

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের অন্তত ৪৩টি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা নিয়ে সংকট রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কারখানায় সমস্যা দীর্ঘদিনের।

সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস এবং মার্চ মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতন ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

কিছু কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলন

ঈদের আগে পাওনা আদায়ের দাবিতে শ্রমিকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। যেমন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় মাহমুদ জিনস কারখানার শ্রমিকরা মানববন্ধন করেছেন। এছাড়া, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে সড়ক অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি ও বিজিএমইএ ভবন অবরুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ২৬ মার্চ সরকার বন্ধ থাকা ১২টি পোশাক কারখানার মালিকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বেতন-বোনাস পরিশোধের সার্বিক চিত্র

ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩,৫৫৫টি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে:

  • বিজিএমইএর সদস্য সচল কারখানা ২,১০৭টি।
    • ঈদ বোনাস দিয়েছে: ৯২% (১,৯৪৪টি কারখানা)
    • মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে: ৩৬% (৭৬১টি কারখানা)
    • ফেব্রুয়ারির বেতন এখনো বকেয়া: ১৬টি কারখানা
  • বিকেএমইএর সদস্য সচল কারখানা ৬১৩টি।
    • ঈদ বোনাস দিয়েছে: ৮০% কারখানা
    • মার্চের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করেছে: প্রায় ৫০% কারখানা
    • ফেব্রুয়ারির বেতন বকেয়া: ২টি কারখানা

নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলার ১৩টি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে, যেখানে কাজ করেন প্রায় ৮,৮৮৮ শ্রমিক।

বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের দুর্ভোগ

বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন। যেমন:

  • রোর ফ্যাশন: জানুয়ারিতে লে-অফ ঘোষণা করা এই কারখানার ১,৩৭৬ শ্রমিকের পাওনা প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
  • স্টাইলক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান্স: ২,০০০ শ্রমিকের পাওনা ২১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬ কোটি টাকা বকেয়া বেতন।
  • টিএনজেড গ্রুপ: প্রায় ৪,০০০ শ্রমিকের ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের বেতন আংশিক পরিশোধিত এবং ফেব্রুয়ারির বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হয়নি।

শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে বিকল্প ব্যবস্থা দরকার

শ্রমিকনেতারা মনে করছেন, সরকার ও মালিকপক্ষ আগে থেকে কঠোর হলে পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না। এখন সমস্যাগ্রস্ত কারখানাগুলোর শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে মালিকদের সম্পত্তি বিক্রি, বিজিএমইএ-বিকেএমইএর তহবিল ব্যবহার অথবা সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর