জি ডাব্লু অপারেটরস বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন মামলায় সালমান এফ রহমান জেলে থাকলেও তার নেতৃত্বাধীন আই জি ডাব্লু অপারেটরস ফোরাম প্রতিদিন বিদেশ থেকে আসা ফোন কলে হাতিয়ে নিচ্ছে দুই থেকে তিন কোটি টাকা। গত ৯ বছরে এই সিন্ডিকেট পকেটে ঢুকিয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি.
আমরা যখন বিদেশে কল করি বা বিদেশ থেকে ফোন আসে, তখন তা সরাসরি হ্যান্ডসেটে আসে না। রিংটোন বাজে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে। এই ধাপ গুলো হলো গেটওয়ে। বিদেশ থেকে প্রথমে কল আসে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ অপারেটরের কাছে সেখান থেকে কল যায় ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ( আইসি এক্সস) এ। এই কানেকশন অপারেটর কলটি পাঠিয়ে দেয় নির্ধারিত ফোন অপারেটরে।
অবৈধ পথে কল আসা-যাওয়া বন্ধ করা এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষে ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল লং ডিস্টেন্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস পলিসির আওতায় তিন স্তরবিশিষ্ট এই পদ্ধতি চালু করে বিটিআরসি।
২০১০ থেকে এই বাজার দখলের চেষ্টা করতে থাকে সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সিন্ডিকেট। চুড়ান্ত ভাবে ২০১৫ সালে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অধিক এই আন্তর্জাতিক কল ব্যবসার বাজার দখলে মরিয়া হয়ে উঠে তারা। নতুন একটি স্তর যোগ করে বিটিআরসি কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিয়মের তোয়াক্কা না করে কাটিয়ে গঠন করা হয় চারটি স্তর । পরিক্ষা মুলক নাম দিয়ে ৯ বছর যাবত পরিচালিত নতুন তৃতীয় স্তরটি পরিচালত হয় সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট। জুড়ে দেয় ‘এই ফোরামের মাধ্যমেই বন্টন হবে সকল কল’ এমন শর্ত। এই সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা btcl এর অন্যান্য লাইসেন্সধারীদের ব্যবসা বন্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যবহার করা হয় btcl এর বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীকে।
কোথাও কোথাও সরাসরি অনৈতিক আশ্রয় নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে এই সিন্ডিকেট কে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ২০১২ সালে বিটিসিএল এর সাথে প্রিপেইড চুক্তির আওতায় লাইসেন্স নেয়া মারবা ক্লিনিং সার্ভিস (এসআরএল) এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর দেলোয়ার হোসেন জানান, “অনেক আশা নিয়ে আমার জীবনের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে বিটিসিএল এর সাথে চুক্তি করে বৈধভাবে ভিওআই পি ব্যবসা চালু করেছিলাম। ছয় মাসও করতে দেয়নি আমাকে এই ব্যবসা। সালমান এফ রহমান সিন্ডিকেট আমাকে সর্ব শান্ত করে দিয়েছে। উপরন্তু btcl এর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায়২০১০ সালে আমার অনউপস্তিতে মারোবার নামে আমার জাল চুক্তি দেখিয়ে আমার ঘাড়ে মোটা অংকের একটা বিল চাপিয়ে দেয়। তারপরও আমি ব্যবসা চালু করতে চাইলে এই সিন্ডিকেটের কার সাজিতে আমি যাতে ব্যবসা চালু করতে না পারি সেজন্য.২০২১ সালে বিটিসিএল এর সাথে মারোবার চুক্তি অনুযায়ী কল রেট না দিয়ে, বিটিসিএল আমাকে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করে একটি চিঠি দেয়।তাই আমি আজ পর্যন্ত ব্যবসা চালু করতে পারি নাই। অথচ সালমান এফ রহমান সিন্ডিকেট এখনো ব্যবসা করে যাচ্ছে”। এই বিষয়ে বিটিসিএল এর মুখ্য মহাব্যবস্থাপ মোঃ হাফিজুর রহমান কে ফোনে যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায় নাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,” অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যেমন থামেনাই তেমনি অসাধু কর্মকর্তারাও থামে নাই । এই সমস্ত অসৎ কর্মকর্তাদের কারনেই দেলোয়ার হোসেন এর মত সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের লাইন চালু করতে পারছে না