মানবপাচার চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার!উদ্ধার ৩২জন
টেকনাফের উপকূলীয় সাগরপথ দিয়ে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য আটকে রাখা রোহিঙ্গাসহ ৩১ জনকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১৫)। এর মধ্যে ২৭ জন রোহিঙ্গা ও চারজন বাংলাদেশি।
এ ঘটনায় মানবপাচারকারী দুই দালালকে আটক করা হয়েছে।
আটকরা হলেন- টেকনাফের হ্নীলার পানখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত অছিউর রহমানের ছেলে মো. আনোয়ার (৪৪) ও টেকনাফ সদর ইউনিয়ন উত্তর লম্বরী ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত রফিকের ছেলে আতিকুর রহমান (৩২)।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে টেকনাফের বাহারছড়া কচ্ছপিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ল অ্যান্ড মিডিয়া) দেবজিত পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। বাহারছড়া কচ্চপিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়। এসময় দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়। আটকদের টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক মানবপাচারকারী দালালদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কক্সবাজারে মরণ নেশা ইয়াবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাগরপথে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী চক্র। এই চক্রের সঙ্গে উখিয়া-টেকনাফের বেশির ভাগ পাচারকারী জড়িত রয়েছে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শিশু, নারী ও পুরুষদের পাচারের জন্য সংগ্রহ করে তাদের দুর্গম পাহাড়ি আস্তানায় আটক রাখে। আটকদের সুযোগ বুঝে পাচারের উদ্দেশ্যে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, পাচারকারীরা তাদের পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করছে।
১২ নভেম্বর উখিয়ার মোছার খোলা এলাকার একলাছ মিয়া ও তার চাচাতো ভাই দুই/তিনজন বন্ধু নিয়ে কচ্ছপিয়া মেরিন ড্রাইভ এলাকায় ঘুরতে গিয়ে মানবপাচারকারী কর্তৃক অপহরণের শিকার হয়। ঘটনার দিন ঘুরাঘুরির একপর্যায়ে তারা ছবি তোলার সময় অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি তাদের কাছে আসে। এ সময় তাদের নাম-ঠিকানা জানতে চেয়ে হঠাৎ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা জোরপূর্বক ভিকটিমদের চোখ বেঁধে ফেলে সেখান থেকে পাহাড়ের চূড়ায় একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে ভিকটিম একলাছ মিয়া সেখানে একটা ছোট ঝুপড়ি ঘরে ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ, শিশুদের দেখতে পায়। এরপর মানবপাচারকারীরা তাকে নির্যাতন করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং মুক্তিপণের টাকা না দিলে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেবে বলে হুমকি দেয়।
একপর্যায়ে ভিকটিম একলাছ মিয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় গত ১৬ নভেম্বর তাকেসহ ১৫-২০ জনকে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে পাহাড়ের চূড়ার ঝুপড়ি ঘর থেকে বের করে সাগর পাড়ে ট্রলারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময়ে কৌশলে সে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাইসহ অন্যান্যরা পাচারকারীদের হেফাজতে থাকায় তাদের উদ্ধারের জন্য র্যাবের সহায়তা কামনা করেন। তারই সূত্রধরে ভিকটিমদের উদ্ধারসহ মানবপাচারকারীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায়। ভিকটিম একলাছ মিয়ার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ১৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে র্যাব-১৫ এর সিপিসি-২, হোয়াইক্যং ক্যাম্পের আভিযানিক দল টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া এলাকায় নুর হোসেনের বাড়ির পেছনে পাহাড়ের চূড়ায় একটি গোপন আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মানব পাচারকারীদের হেফাজত থেকে পাঁচ বাংলাদেশি (পুরুষ-৩, নারী-১, শিশু-১) ও ২৬ রোহিঙ্গা নাগরিকসহ (পুরুষ-০২, নারী-০২ ও শিশু-২২) মোট ৩১ জন ভিকটিমকে উদ্ধার ও পাচার চক্রের দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাবের আভিযানিক দল।
উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ভিকটিমদের মালয়েশিয়ায় নেওয়ার কথা বলে কচ্ছপিয়ার পাহাড়ের চূড়ায় আস্তানায় আটকে রাখে মানবপাচারকারীরা। সেখানে থাকা অবস্থায় মিয়ানমারে আছে বলে ভিকটিমদের পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা দাবি করা হতো। এভাবে করে অনেকের কাছ থেকে জনপ্রতি এক লাখ করে টাকা আদায় করে পাচারকারীরা। উদ্ধারকৃত এক ভিকটিমের ভাষ্যমতে তাকে আটদিন ধরে পাহাড়ি ওই আস্তানায় আটকে রাখা হয়। অপর এক ভিকটিমকে আটকে রাখা হয় ১৩ দিনের অধিক সময়। উদ্ধারকৃত এ সব ভিকটিমদের ঠিকমতো দেওয়া হতো না খাবার। করা হতো বিভিন্নভাবে নিযার্তন।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের চক্রের মূলহোতাসহ আরও পাঁচ/সাতজন কৌশলে পাহাড়ের অপর পাশ দিয়ে পালিয়ে যায় বলেও জানায় তারা।উদ্ধার কারিদের কৌশলে উচ্চ বেতনে চাকরি ও বিলাসবহুল জীবনযাপন অথবা জোর পূর্বক বিবাহ সহ যৌন কর্মি হিসেবে তাদেরকে বিক্রি করার কথা বের হয়ে আসে।