২০২৫ সাল জামায়াতের জন্য টার্নিং পয়েন্ট
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ২০২৫ সাল জামায়াতের জন্যেও বছরটি টার্নিং পয়েন্ট।ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দুই হাজার জীবনের শাহাদাত, ত্রিশ সহস্রাধিক আহত ও পঙুত্বের মাধ্যমে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে আগামী ২০২৫ সাল একটি টার্নিং পয়েন্ট।
তিনি আরও বলেন, দেশের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো জেঁকে বসে আছে। এদের ব্যাপারে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদের দোসররা মাথা চারা দিয়ে উঠতে না পারে।
তিনি বলেন, সংস্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় লাগবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে। এজন্যে এ সরকারকে সময় দিতে হবে, তবে তা খুব দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়।
তিনি ২৯ ডিসেম্বর রবিবার জামালপুর জেলা জামায়াত আয়োজিত ইসলামপুর উপজেলা আমীর রাশেদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সেক্রেটারি আবু মুছার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উপজেলা ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মো: ছামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর এডভোকেট মুহাম্মদ নাজমুল হক সাঈদী ও জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার। আরও বক্তব্য রাখেন জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক খলিলুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি এডভোকেট আবদুল আওয়ালসহ স্থানীয় জামায়াত ও শিবির নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক গোলাম পারোয়ার বলেন, পতিত সরকার কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরশাসক ছিল। তারা জনগণের ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মিডিয়ার স্বাধীনতা এবং মৌলিক মানবাধিকারসহ সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাজীবন, ধর্মীয় মূল্যবোধসহ সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। তারা ২০১৪ সালে ভোটারবিহনি, ১৮ সালে নিশি রাতে এবং ২৪ সালে ডামি নির্বাচন করে জনগণের সাথে তামাশা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ আর এরকম নির্বাচন হতে দিবে না। পতিত সরকার তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বানিয়ে আমাদের নিরপরাধ পাঁচ জন শীর্ষনেতাকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। চিরদিনের জন্য পঙু বানিয়ে শতশত নেতাকর্মীকে।
শেখ হাসিনার হিংসাত্মক রাজনীতির প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তান্ডবতা, মানুষ হত্যা করে লাশের উপর নর্দন-কুর্দনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিলো। পরবর্তীতে ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসনের পর ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ পথ খুঁঁজে পেয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য এখনো অনেক দূরে। হাজারো ছাত্রজনতার রক্ত, লাখো মানুষের জেল, জুলুম ও ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর দেশ গড়ার জন্যে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও ইউনিট নেতৃবৃন্দকে গ্রামে গ্রামে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক কাজের মাধ্যমে সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে তিনি জামায়াত কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি ডক্টর ছামিউল হক ফারুকী বলেন, জামায়াত একটি নৈতিক সংগঠন। জামায়াতের সর্বস্তরের কর্মীদেরকে উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। তিনি ইসলামের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহবান জানান।
তিনি বিকাল তিনটায় জামালপুর জেলা ও উপজেলা দায়িত্বশীলদের সাথে বৈঠক করেন এবং সন্ধ্যা ছয়টায় জামালপুর শহর শাখার রুকন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।