র্যাবের গাড়ি থেকে আওয়ামী নেতাকে ছিনিয়ে নিলো পিস্তল বাপ্পি
গাজীপুরের টঙ্গীতে র্যাবের গাড়ি থেকে কবির উদ্দিন বেপারী (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শেখ আরিফুল ইসলাম বাপ্পি ওরফে পিস্তল বাপ্পির বিরুদ্ধে। বাপ্পি সম্পর্কে জানা যায় সে টঙ্গী পূর্ব থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে টঙ্গী পূর্ব থানা ৪৫ নং ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী।
অনুসন্ধানে জানা যায়,টঙ্গীর বউ বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব করে আসছিলো আওয়ামী লীগ নেতা কবির বেপারীর পরিবার। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তার দুই ভাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যে কারনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক রাজত্ব তাদের হাতেই থাকে।
এছাড়াও তাদের ভাগিনা আরিফুল ইসলাম বাপ্পি ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী। বাপ্পি ওই এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানান অপকর্ম করে আসছিলেন। তিন হাজার পিস ইয়াবা ও বিদেশি পিস্তলসহ বাপ্পি র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটেন। এছাড়াও বিএনপি নেতা হালিম উদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যখন যেই দলই ক্ষমতায় আসে তাদের পরিবারের অত্যাচার-জুলুম থেকে এলাকার নিরিহ লোকজন রেহাই পায় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বিভিন্ন গনমাধ্যমে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় বিএনপি দুই নেতার নাম উঠে আসলেও মুলত কবির উদ্দিন বেপারীকে ছাড়িয়ে নেয়ার মাস্টার মাইন্ড হলো আরিফুল ইসলাম বাপ্পি ওরফে পিস্তল বাপ্পি ।
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে টঙ্গী বাজারসংলগ্ন আনারকলি সিনেমা হল এলাকায় ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পর টঙ্গীতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ।
কবির উদ্দিন বেপারী স্থানীয় ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপির দুই নেতা হলেন— ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হালিম উদ্দিন বেপারী ও একই ওয়ার্ড বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সমির উদ্দিন বেপারী। তারা সকলেই টঙ্গীর বউবাজার এলাকার মৃত আক্কাস আলী ওরফে আক্কু বেপারীর ছেলে।
বিএনপির দুই নেতা হলেন- ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হালিম উদ্দিন বেপারী ও একই ওয়ার্ড বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সমির উদ্দিন বেপারী। তারা টঙ্গীর বউবাজার এলাকার মৃত আক্কাস আলী ওরফে আক্কু বেপারীর ছেলে।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার রাত ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় বউবাজার এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-১ এর একটি দল। এ সময় বহু অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী নেতা কবির উদ্দিন বেপারীকে আটক করে রাজধানী উত্তরার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন র্যাব সদস্যরা। পরে তার দুই ভাই বিএনপি নেতা হালিম উদ্দিন বেপারী ও সমির উদ্দিন বেপারী খবর পেয়ে তাদের সমর্থকদের নিয়ে টঙ্গী বাজারসংলগ্ন আনারকলি সিনেমা হল এলাকায় র্যাবের গাড়ি আটকে কবির উদ্দিন বেপারীকে রেখে দেয়।
প্রাপ্ত সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, একদল লোক র্যাবের গাড়ি আটকে কবির বেপারীকে নামিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় বাপ্পির গ্যাং গ্রুপ র্যাবের গাড়ি ঘিরে মিছিল করার দৃশ্য ফুটেজে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা কবির উদ্দিন বেপারীর মোবাইল ফোনে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হালিম উদ্দিন বেপারী ফোন রিসিভ করেননি।
ওয়ার্ড বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সমির উদ্দিন বেপারী জানান, আমি ঢাকায় ছিলাম। আমার ভাগিনা ফোন করে আমাকে জানিয়েছে কবির ভাইকে আটকের পর র্যাব আনারকলি হলের সামনে থেকে ছেড়ে দিয়েছে।
টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহম্মেদ সুমন বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। বিএনপি নেতা হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া জঘন্য কাজ। দলীয় সভা ডেকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে যুগান্তরকে জানান, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ বিষয়ে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।