সংবাদ শিরোনাম
মুন্সীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
টঙ্গীবাড়ী বালিগাঁও বাজারে ডক্টরস হসপিটাল নামক একটি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও ডাক্তারের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বালিগাঁও বাজারের বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিগাঁও আমজাদ আলী মহাবিদ্যালয়ের গেইট স্বন্নিকটেই অবস্থিত ডক্টরস হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু ঘটেছে এমনটা অভিযোগ করেছে স্বজনরা।
জানা যায়,পূর্ববর্তী সময়ে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এ ডক্টরস হসপিটাল নামক ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে।
মৃত্যের স্বজনদের নিকটে থেকে জানাযায়, শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বাসিরা গ্রামের দোকানিবাড়ির বাসিন্দা লিটন দোকানদার (৪০) পিঠে ও ঘাড়ে ব্যাথা অনুভব হলে তাৎক্ষনিক চিকিৎসার জন্য বালিগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসলে কর্তব্যরত মহিলা ভিজিটর রোগীকে দ্রুত ক্লিনিকে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। রোগীর সাথে থাকা অভিভাবকরা উপায়ান্তর না পেয়ে মহিলা ভিজিটের কথা অনুযায়ী দ্রুত ডক্টর ক্লিনিকে রোগীকে নিয়ে যান। বালিগাঁও বাজারের ডক্টরস হসপিটালে আসলে কর্তব্যরত ডা. মোঃ শরিফুল ইসলাম কোনো রকম পরিক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই নার্সকে নির্দেশ করেন রোগীকে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে। তখন রোগী নিজেই ইনজেকশন দিতে বারণ করলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর বারণকে তোয়াক্কা না করে নার্সকে দিয়ে পরপর চারটি ইনজেকশন
রোগীর শরীলে প্রয়োগ করান। ইনজেকশন প্রয়োগের পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রোগীকে ঢাকা রেফার্ড করা হবে বলতে বলতেই রোগী ব্যাথার যন্ত্রণায় দাপিয়ে মৃত্যুবরণ করলে ডা. শরিফুল ইসলাম তাৎক্ষণিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে যায়।
রোগীর স্বজনদের সুত্রে আরোও জানা যায়, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় লিটন দোকানদার মারা গেছে। তিনি রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি অত্র এলাকার মধ্যে একজন নম্র ও ভদ্র মানুষ ছিলেন।তিনি ছিলেন একমাত্র আয়ের উত্স।
তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হসপিটালে ছুটে গিয়ে দেখি হসপিটালের সামনে থানা পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে রেখেছে,গেইট আটকিয়ে রেখেছে আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ জানায়, ‘ভেতরে ঢুকার পার্মিশন নাই, ঢুকতে পারবেন না। ওসি স্যারের নির্দেশ আছে কাউকেই ভিতরে ঢুকতে দেয়া হবে না- যারা আছে ভিতরে তারাই থাকবে ভিতরে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না’।
রোগী মৃত্যুর ঘটনার সংবাদ পেয়ে হসপিটালে ছুটে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রণয় মান্না দাস। তিনি হসপিটালে এসে হসপিটালের মালিক পক্ষ বা ডাক্তার নার্স কাউকেই পাননি এবং রোগীর লোকের কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় তিনি ঘটনাস্থল তথা ডক্টরস হসপিটালটিকে সিলগালা করে দিয়ে যান।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে চাচাতো ভাই সাকিব বলেন, আমার চাচাতো ভাই লিটন দোকানদার। হঠাৎ পিঠে ও ঘাড়ে ব্যাথা উঠলে তাকে চিকিৎসার জন্য বালিগাঁও ডক্টরস হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিউটি ডাক্তার কোনোরুপ পরিক্ষা- নিরিক্ষা না করেই নার্সকে পরপর চারটি ইনজেকশন দিতে বললে আমার ভাই বারণ করেন তা না শুনে নার্স পরপর চারটি ইনজেকশনই তার শরীলে প্রয়োগ করেন, ভাইয়ের অবস্থা আরো খারাপ হলে ডাক্তার বলেন, ঢাকা রেফার্ড করা হবে, বলার সাথে সাথেই আমার ভাই মারা যান। এসময় ডাক্তার আমি একটু আসতেছি বলেই সেখান থেকে পালিয়ে যান। তার কিছুক্ষন পর হসপিটালের সকল স্টাফ ও মালিকপক্ষ পালিয়ে যায়। আমার ভাইকে অযথা ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হলো এবং থানা পুলিশ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসলেও আমরা ভাই হত্যার কোনো সু-বিচার পেলাম না। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম তিনি যেন আমার ভাই হত্যার বিচার করেন। এর বেশি আর কিছু বলার নাই- হায়াত মউত তো আল্লাহর হাতেই।
ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর বিষয় জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, রোগীটি বুকে ব্যাথার চাপ নিয়ে আসছিল। প্রেসার নরমাল ছিল। আপনি কি কি ইনজেকশন রোগীর শরীলে প্রয়োগ করেছেন? জানতে চাইলে বলেন, অ্যালজিন, অ্যাবিস্টেট এবং ম্যাক্স প্রো ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়েছে। রোগীকে ইসিজি করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, হ্যা ইসিজি করা হয়েছিল, রিপোর্টে ইসিজি খারাপ আসছে। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে প্রাথমিক ট্রিটমেন্টের পর রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলি কিন্তু রোগী স্বজনরা তা করেনি। পরে রোগী এখানেই মারা যান। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ রোগী মৃত্যুর সাথে সাথে আপনি হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন এ বিষয়ে কি বলবেন জানতে চাইলে বলেন, পালিয়ে কেন যাব, ঔষধ পত্র প্রমাণাদী তো আছেই। আমরা সবাই ছিলাম কেউ পালাইনি। রোগীকে কোনো ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়নি।
এবিষয়ে ডক্টরস হসপিটাল ক্লিনিকটির পরিচালক ফজলু রহমান(শেয়ার হোল্ডার) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, রোগীকে কোনো ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। নিহত লিটন দোকানদার বুকে ব্যাথা নিয়ে হসপিটালে আসছে। তার বুকে অনেক ব্যাথা হচ্ছিল বলে রোগী জানালে ডাক্তার তার ব্যাথা কমানোর জন্য ইনজেকশন প্রয়োগ করে তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বললেও তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়নি। তিনি মারা গেছেন। এই দোষ তো আমাদের না তাইনা!
বালিগাঁও ডক্টরস হসপিটালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনরা কোন অভিযোগ করেছিল কি না জানতে চাইলে টঙ্গীবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ মোল্লা শোয়েব আলী বলেন, না রোগীর লোকজন কোনো অভিযোগ করেন নি। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বা রোগীর স্বজনরা কোনো সহযোগিতা চেয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমরা তো এই ঘটনার সংবাদ শুনেই সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে যার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে তাকেই সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সেটা হসপিটাল কর্তৃপক্ষের লাগলেও করব, রোগীর লোকজনের আইনগত সহযোগিতা লাগলেও করব। সেকারনেই আমরা ওখানে গিয়েছিলাম এবং সেটিই করেছি।
আপনার মতামত লিখুন :
Leave a Reply
বিস্তারিত খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর