সৈয়দপুরে ৩০ টাকায় মেলে শান্তির ঘুম
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শান্তির ঘুম মেলে মাত্র ৩০ টাকায়। আছে কম্বল-চাটাইয়েরও ব্যবস্থা।
জেলার বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুর। আর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম অনেকেরই রাতের ঠিকানা। ট্রেনে ফেরি করে নানা জিনিসপত্র বিক্রি শেষে আসেন হকাররা। ভিক্ষুকেরাও সারাদিন ভিক্ষা করে ফেরেন। আসেন ছিন্নমূলেরাও।
দিনের শেষে রাতের এ ঠিকানায় যারা আসেন, তাদের উদ্দেশ্য শান্তির ঘুম। রাতে একটি কম্বল ও একটি চাটাইয়ে শান্তির ঘুম দেন তারা। গুণতে হয় মাত্র ৩০ টাকা। রাত্রিযাপন শেষে যার যার কাজে চলে যান তারা।
সৈয়দপুর রেলস্টেশনে কথা হয় ট্রেনের হকার আজমত আলীর (৪৫) সঙ্গে। গল্পে গল্পে তিনি বলেন, আমার বাড়ি নাটোরে। বুট-বাদাম ও চানাচুর বিক্রি করি। ঢাকা-চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনে বিকেল ৫টা-৬টার দিকে সৈয়দপুরে আসি। রাতে ৩০ টাকায় কম্বল ও চাটাই নিয়ে স্টেশনে ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন সকালে আবার নীলসাগর ধরে এসব বিক্রি করতে করতে নাটোরে চলে যাই।
শারীরিক প্রতিবন্ধী রূপবানু (৩৬), আপন বলতে কেউ নেই। নেই কোনো ঠিকানাও। থাকার মধ্যে আছে শুধু সমাজসেবা বিভাগ থেকে পাওয়া একটি হুইল চেয়ার। সারা দিন এটি চালিয়ে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
রাতে শান্তির ঘুমের জন্য রূপবানুও আসেন এ রেলস্টেশনে। কথায়-গল্পে তিনি জানান, কম্বল ও চাটাই কিছুটা ছাড়েই পান তিনি। হুইল চেয়ারটি হেফাজতে রেখে প্রতি রাতে রূপবানু শান্তির ঘুম দেন। এভাবে কাটছে তার জীবন।
স্টেশন ঘুরে জানা যায়, এসব চাটাই-কম্বল ভাড়া দেওয়ার নির্দিষ্ট লোক আছে, তবে সামনে আসতে চান না। প্রতি রাতে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ৫০-৭০ জন ঘুমান।
মাঝে-মধ্যে দুষ্ট লোকেরা রাত্রিযাপনকারীদের জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যান। তবে এখানে যারা আসেন, তারা মূলত নিম্ন আয়ের। তাদের সঙ্গে তেমন টাকা-পয়সাও থাকে না। এজন্য চুরির ঘটনাও কম ঘটে ।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল ইসলাম রতন জানান, যতটা জানি, টাকা নেওয়া হয় কম্বল ও চাটাইয়ের জন্য, জায়গার জন্য নয়। যাদের থাকার জায়গা নেই, তারাই মূলত আসেন।
তিনি জানান, কম্বল-চাটাই নিয়ে যে যেখানে খুশি, ঘুমাতে পারেন। আর অনেকে প্ল্যাটফর্মে ঘুমানোয় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই ছিন্নমূল মানুষসহ আশ্রয়হীন অনেকে আসেন রাতে ঘুমাতে।