শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন সত্য করতে সহায়তা করবো-ড. ইউনূস
পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা পূরণ করতে এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই বেছে নেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবে তিনি রাজিও হয়ে যান।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূস তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি এটি করছি; কারণ, দেশের তরুণেরা এটিই চেয়েছিল এবং আমি তাদের এটি করতে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, এটি আমার স্বপ্ন নয়, তাদের স্বপ্ন। আমি আসলে এটি (স্বপ্ন) সত্য করতে তাদের সাহায্য করছি।
ড. ইউনূস বলেন, সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো নিরাপত্তা পরিস্থিতি।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। শত শত থানা আগুনে পুড়ে যায়। সব পুলিশ সদস্য দায়িত্বপালন থেকে বিরতিতে যান। পুলিশ ইউনিয়ন কর্মবিরতি ঘোষণা করে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আইনশৃঙ্খলা সবার আগে, যাতে মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারে বা কাজ করতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর যা বাকি ছিল, তা হলো বিশৃঙ্খলা, পুরোপুরি বিশৃঙ্খলা।
ড. ইউনূস আরও বলেন, এমনকি (আগের) সরকার যা করেছে, যা কিছুই করেছে, তার কোনো অর্থ হয় না। প্রশাসন কী জিনিস, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না।
অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, বিশৃঙ্খলার মুখেও আসলে অনেক আশা আছে। তার মতে, সংস্কারই মুখ্য বিষয়।
সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের সাধারণ দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের। এ দাবি থেকেই প্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী নৃশংস ও প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালায়, যা পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।
বাক্স্বাধীনতার দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সংস্কার খুবই প্রয়োজন। অধ্যাপক ইউনূস অভিযোগ করেন, তিনি নিজেই বাক্স্বাধীনতা দমনের শিকার হয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দুজন- নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সংস্কারের একটি বিষয় আছে। শিক্ষার্থীদের চাপে ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিভাষাগত দিক থেকে তিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন একজন জল্লাদ।
অধ্যাপক ইউনূস স্বীকার করেন, এমন সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যার সঙ্গে সবাই একমত হবে না। তবে তিনি আশা করেন, আগে যে সিদ্ধান্ত এসেছে, তার চেয়ে ভালো হবে।
তিনি বলেন, আমি বলছি না, আমি একটি সরকার চালাতে পারব। আমি বলছি, আমার কিছু প্রতিষ্ঠান চালানোর অল্পবিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। আমি সেই অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে যতটা পারি কাজে লাগাব। কেউ পছন্দ করবে, কেউ করবে না। তবে কাজটা আমাদের করে যেতে হবে।