জাহাজে আগুন লেগে ৩ জন নিহত
জাহাজে আগুন লেগে ৩ জন নিহত হয়েছেন। বাংলার জ্যোতির বিস্ফোরণ কি নিতান্তই দূর্ঘটনা নাকি হত্যা কান্ড। একটি বিধ্বংসী ঘটনায় ৩০ সেপ্টম্বর ২০২৪ তারিখে চট্রগ্রাম বন্দরে অপরিশোধিত তেল নিষ্কাশনের সময় বাংলার জ্যোতি তেলের ট্যাংকারটি বিস্ফোরিত হয়, যার ফলে তিনজন ত্রু সদস্য মারা যান এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। বিস্ফোরণ কার্গো অপারেশন চলাকালিন নিরাপত্তা অনুশীলন সম্পর্কে জরুরী প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল জোনে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ একটি চরম ধ্বংসাত্মক ঘটনা ছিল, যা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ঘটে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় বিএসসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রাথমিক তদন্তে বিস্ফোরণের পেছনে কারণ জানা গেছে, ট্যাঙ্কারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল, যার ফলেই এই বিপর্যয় ঘটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, *হাইড্রোকার্বন বাষ্প*, অক্সিজেনের উপস্থিতি, এবং কোনও ইগনিশন সোর্স (যেমন বৈদ্যুতিক শক) মিলে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। অপারেশন চলাকালীন সঠিক নিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ না করায় এই দুর্যোগ ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা।
এ ধরনের দুর্যোগ এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত *বায়ুচলাচল ব্যবস্থা, *গ্যাস-মুক্ত পদ্ধতি, এবং উপযুক্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম* ব্যবহারের গুরুত্ব বিশেষজ্ঞরা নির্দেশ করছেন। এর পাশাপাশি, ট্যাঙ্কারের জ্বালানি বাষ্প নিয়ন্ত্রণের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল। এছাড়া, প্রয়োজনীয় ক্রু প্রশিক্ষণ এবং ভালো মানের সরঞ্জাম ব্যবহারের অভাব ছিল এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিক্রিয়া:
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই দুর্ঘটনার পরপরই *বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি)* এমটি বাংলার তেল ট্যাঙ্কার থেকে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বন্দর এলাকায় *নৌবাহিনী, **কোস্টগার্ড* এবং *বন্দর কর্তৃপক্ষ* মিলে চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ট্যাঙ্কারটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম বন্দরের রেডিও কনট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, ১১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ক্রুড ওয়েল নিয়ে ট্যাঙ্কারটি নোঙরের অপেক্ষায় ছিল।
উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ:
বিস্ফোরণের এই ঘটনা তদন্তের জন্য *নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন* একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। *বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে* এই তদন্ত কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে আকস্মিক এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে সুপারিশসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, ৫ অক্টোবর এই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই দুর্ঘটনায় ভবিষ্যতে বন্দর এলাকায় আরও শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, তরল পণ্য স্থানান্তরের সময় সঠিক নিরাপত্তা প্রটোকল নিশ্চিত করা এবং ট্যাঙ্কারের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আগের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ:
এটি উল্লেখযোগ্য যে, ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী নদীর *ডলফিন জেটিতে* “বাংলার জ্যোতি” নামের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে আগুন লাগে। সেই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু ঘটে এবং দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ট্যাঙ্কারগুলোতে নিরাপত্তার অভাব এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনার প্রবণতা বেড়েছে, যা দেশের শিপিং সেক্টরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যতে করণীয়:
এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে এড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা আরও জোর দিয়ে বলেছেন যে, ট্যাঙ্কার এবং অন্যান্য জলযানগুলিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, পর্যাপ্ত ক্রু প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। *জ্বালানি বাষ্পের নিয়ন্ত্রণ*, পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল এবং মানসম্মত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই দুর্ঘটনার পরপরই বন্দর এলাকায় *নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পদক্ষেপ* গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষত তরল পণ্য স্থানান্তরের সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে।
=========