হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে সাসপেন্ড
বাংলাদেশ দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে তাকে।
এর জবাব ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে। মঙ্গলবার মিরপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। হাথুরুর জায়গায় আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব সামলাবেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ফিল সিমন্স।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের মেয়াদ ছিল। কিন্তু তার আগেই বরখাস্ত করল বিসিবি। নতুন কোচ হিসেবে ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ফিল সিমন্সের নাম ঘোষণা করেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কোচের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছিলাম। দুই-তিনটা ঘটনা ঘটেছে। এটা দলের জন্য ভালো উদাহরণ ছিল না। শোকজ ও সাসপেনশন দেওয়া হয়েছে। বরখাস্ত করার আগে আমরা তাকে নিয়ম মেনে শোকজ নোটিশ করেছি। এরপর আমরা বরখাস্ত করব। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত কোচ ফিল সিমন্স। ’
হাথুরুর বিদায়ের ব্যাপারটি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে ফেলেছিল বিসিবি। গতকাল রাত থেকেই চাউর হয়, হাথুরু বরখাস্ত হচ্ছেন। অবশেষে আজ তা নিশ্চিত করলেন বোর্ড সভাপতি। মূলত ২০২৩ বিশ্বকাপের সময়ের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে হাথুরুকে। ৪৮ ঘণ্টা পর বরখাস্ত হয়ে যাবেন তিনি। তাকে বরখাস্ত করার পেছনে অনুমোদন ছাড়াই ছুটিতে যাওয়াকেও কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন ফারুক।
হাথুরুকে বরখাস্ত করতে যাওয়ার কারণ জানিয়ে ফারুক বলেন, ‘দুই-তিনটা ঘটনা ঘটেছে যেগুলো মেনে নেওয়া একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার কাছে খুব পীড়াদায়ক ছিল। এটা ভালো উদাহরণ ছিল না আরকি। তাই ওইদিক বিবেচনা করে আমরা আজকে একটা শোকজ নোটিশ দিয়েছি। আপনারা জানেন এই প্রক্রিয়াগুলো খুব একটা সহজ নয়। আইনি দিক থাকে এগুলোর। ’
টাইগারদের প্রধান কোচ হিসেবে এর আগে ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে দায়িত্বে ছিলেন হাথুরু। সেবার ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার চুক্তির মেয়াদ থাকলেও মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। আর এবার বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন তিনি।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব নেওয়ার পর হাথুরুর বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। গুঞ্জন শোনা যায়, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে জাতীয় দলের এক ক্রিকেটারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন হাথুরু। এছাড়া দলে সিনিয়র-জুনিয়র বিভেদ তৈরির অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বিসিবি প্রধান জানালেন, ছুটি সংক্রান্ত ঝামেলাও ছিল তার।
এদিকে ফিল সিমন্সের নিয়োগ নিয়ে ফারুক বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান সিরিজ ও চ্যাম্পয়নস ট্রফির জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্তর্বর্তীকালীন হেড কোচ নিয়োগ দেওয়ার। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন হেড কোচ হিসেবে ফিল সিমন্স চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত কাজ করবেন। ‘
কোচ হিসেবে বেশ পরিচিত মুখ সিমন্স। সাবেক এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর আয়ারল্যান্ডের কোচ হন তিনি। ৮ বছরের এই লম্বা সময়ে তার অধীনেই ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে আইরিশরা।
তবে ২০১৫ বিশ্বকাপের পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেড কোচ হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন সিমন্স। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে তলানির দিকে থাকা দলটিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শেখান তিনি। শুধু তা-ই নয়, তার অধীনে ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর পরের বছরই অবশ্য সিমন্স আফগানিস্তানের কোচ হন। কিন্তু ২০১৯ সালে আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডাগআউটে ফেরেন তিনি। সেবার অবশ্য ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী ছিল তার জন্য। তাই ২০২২ টি-টোয়েন্টি পদত্যাগ করেন বিশ্বকাপের পরপরই।