রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

সিরাজদিখানে পাওনা টাকা চাওয়ায় সাংবাদিক লাঞ্চিত

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি / ৯১ সময়
আপডেট: সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪
Oplus_131072

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে স্থানীয় এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে সার্টের কলারে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে মতিন মাদবর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

শনিবার রাত অনুমান পৌনে ৯টার দিকে অভিযুক্ত মতিন মাদবরসহ আরো বেশ কয়েকজন সিরাজদিখান থানা ফটকের একটি চায়ের দোকান থেকে ওই সাংবাদিকের সার্টের কলারে ধরে টেনে হিচড়ে থানার ভিতরে ওসি তদন্ত মোঃ মুক্তার হোসেনের কক্ষে নিয়ে বসান। এসময় আনিসুর রহমান নিলয় ও আরিফ হোসেন হারিছ নামে স্থানীয় আরো দুই সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

লাঞ্চনার শিকার সাংবাদিক মোহাম্মদ রোমান হাওলাদার দৈনিক দৃষ্টি প্রতিদিন ও অনলাই নিউজ পোর্টাল পিপলস নিউজ২৪ এর সিরাজদিখান প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, পেশাগত ভাবে ওই সাংবাদিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করেন। সেই সুবাদে প্রায় ৬ মাস পূর্বে অভিযুক্ত মতিন মাদবর তার ভাগনে আরিফের মাধ্যমে বড় আকারের ৪-৫ ফেষ্টুন ও ব্যানার ডিজাইনসহ প্রিন্ট করে দেওয়ার অর্ডার দেন। পূর্ব পরিচিত মতিন মাদবরের দেওয়া ব্যানার ডিজাইন ও প্রিন্টিংয়ের কাজ শেষ হলে মতিনের ভাগনে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কত বিল হয়েছে জানতে চাইলে ডিজাইন ও প্রিংন্টিয়সহ ২৫ শত টাকা বিল হয়েছে মর্মে তাকে জানান। এর খানিক ক্ষন পর মতিনের ভাগনে ফোন করে বলেন, মামা বললো আরো কমে বানাতে পারবে আপনি ২৫ শত টাকা চান কেন। পরে ওই সাংবাদিক তার ডিজাইনের পারিশ্রমিক বাদে কেবল প্রিন্টিংয়ের ২ হাজার টাকা তাকে দিতে বলেন। কিন্তু মতিন মাদবর ও তার ভাগনে প্রিন্ট করা ফেষ্টুন ও ব্যানার না নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সেসময় অভিযুক্ত মতিন মাদবর ও তার ভাগনে কুয়েতে তার দোকানে অবস্থানরত ছিলেন।

সম্প্রতি মতিন মাদবর দেশে আসেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে দোয়া চেয়ে একটি পোষ্ট করেন। ওই পোষ্টে সাংবাদিক তার পারিশ্রমের ২৫ শত টাকা চেয়ে মন্তব্য করেন। এর আগেও সাংবাদিক তার কাজের পারিশ্রমিক চাইলে বরাবরই অভিযুক্ত মতিন মাদবর কিসের টাকা পাইবা তুমি। এমন কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে মারধর ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। ফেইজবুক পোষ্টে মন্তব্যের জেরে শনিবার রাত অনুমান পৌনে ৯টার দিকে থাানা ফটকের চায়ের দোকানের ভিতর থেকে সার্টের কলার ধরে টেনে হিচড়ে সাংবাদিককে থানার ওসি তদন্তের রুমে নিয়ে যান।

পরে সেখানে উপস্থিত দুই সাংবাদিকের মধ্যস্ততায় সাংবাদিকের পাওয়ানা টাকা পরিশোধ করেন অভিযুক্ত মতিন মাদবর। তবে অভিযুক্ত মতিন মাদবর কোন ক্ষমতার দাপটে কিংবা কোন শক্তির ছায়াতলে থেকে একজন সাংবাদিকের সার্টের কলারে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশের সামনে নিয়ে বসান এমন প্রশ্ন সাংবাদিক মহলের। তার কাছে টাকা না পেলে তিনি সিনিয়র সাংবাদিকদের বিষয়টি অবগত করে সমাধান করতে পারতেন। এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযুক্ত মতিন মাদবরের যথাযথ বিচারের দাবী জানান তারা। লতব্দী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ কামাল হোসেন মাদবর বলেন, মতিনতো এমপির পাওয়ার দেখায়। কিন্তু ওর কোন রাজনৈতিক পদ পদবী নাই।

এমপি ও এমপির ছেলের সাথে তার ভালো সম্পর্ক তাই সে ওই পাওয়ার দেখায়। এমপির সাথেওতো আমাদেরও ভালো সম্পর্ক, কই আমরাতো তার পাওয়ার দেখাইলাম না। সাংবাদিকের সার্টের কলারে ধরে থানার ভিতরে নিয়ে যদি গিয়ে থাকে তাহলে তাদের পাওয়ারেই নিয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

লাঞ্চনার শিকার ভুক্তভোগী সাংবাদিক মোহাম্মদ রোমান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, বৈধ কাজ করে আমার কাজের পারিশ্রমিক না দিয়ে তালবাহানা করে এক পর্যায়ে সে আমার কাজের টাকা দিতে অস্বীকার করে। আমি আমার কাজের টাকা চাওয়ায় আমাকে সার্টের কলারে ধরে থানার ভিতরে নিয়ে যায় মতিন মাদবর। আমি যদি তার কাছে টাকা না পেতাম তাহলে সে টাকাটা দিলো কেন? এমপির সমর্থন করে বলে কাজ করিয়ে কাজের টাকা না দিয়ে উল্টোর দাপট দেখিয়ে একজন সাংবাদিকের কলারে ধরে টেনে হিচড়ে থানার নিয়ে যাবে,তাও আবার পুলিশের অফিস কক্ষে। এতে কিসের ইঙ্গিত বহন করে। তবেকি যারা এমপির সমর্থন করে তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যা ইচ্ছে তাই করবে? এর যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে আগামীকাল আরেকজনের সাথেও এমনটা করার সাহস পাবে।

ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দিতে না চাইলে এখনি এর যথাযথ বিচার হওয়া দরকার। আমার মন্তব্যে যদি তার অসম্মান হয়ে থাকে তাহলে সে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা করতে পারতো কিন্তু সে সার্টের কলারে ধরে টেনে থানার ভিতরে পুলিশের অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে কিসের জানান দিলো? অভিযুক্ত মতিন মাদবরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা একটা মিসটেক আমাদের মধ্যে মিমাংসা হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আর লেখালেখির দরকার নাই। আপনি পরে আমার সাথে দেখা কইরেন। এ ব্যপারে সিরাজদিখান থানার ওসি তদন্ত মোঃ মুক্তার হোসেন বলেন, সাংবাদিককে টেনে নিয়ে আসছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে আমি জানি যে তারা থানার ভিতরেই ছিলো। আরো দুই সাংবাদিকও সেসময় উপস্থিত ছিলো। যে সাংবাদিক টাকা দাবী করেছিলো তার টাকাও দিয়ে দিয়েছে মতিন মাদবর। সার্টের কলারে ধরে টেনে হিচড়ে একজন সাংবাদিককে আপনার কক্ষে বেআইনি ভাবে এনে কেউ বসাতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও তিনি বলেন, পরে যতটুকু জানতে পারলাম সে যখন তাকে ধরে এনেছে সে নাকি তখন তাকে চিনতো না।

=======


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর