শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

শেরপুরে বন্যায় নতুন ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত

শেরপুর / ৮৯ সময়
আপডেট: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

শেরপুরে বন্যায় নতুন ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের চারটি পাহাড়ি নদীর উজানে পানি কমতে শুরু করলেও ভাটি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে।

এ নিয়ে জেলার পাচঁ উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ।

 

এদিকে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় বন্যার পানিতে ডুবে দুই ভাইসহ এ পর্যন্ত মারা গেছে সাতজন।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ীর খলিশাকুড়া আন্ধারুপাড়ার ইদ্রিস আলী (৬৬), নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের দুই ভাই হাতেম আলী (৩০) ও  আলমগীর হোসেন (১৬)। বাঘবেড় বালুরচরের অমিজা খাতুন (৪৫), পোড়াগাওঁ ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন (৭০), নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নে কুড়েকান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেন (৫০) বন্যার পানিতে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীর সন্ধাকুড়া থেকে একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এদিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিএনপি, জামায়াত ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালীতে বিপৎসীমার ২৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি এখনও বিপৎসীমার সমান রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গতকাল শনিবার রাত থেকে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নকলা পৌর এলাকাসহ পুরো উপজেলাই প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায়। বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তিন দিন ধরে বন্যা হলেও এখনও ত্রাণ পাননি তারা। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে সাতজন। এ ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছে অনেকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানিয়েছে, শেরপুর নাকুগাঁও স্থলবন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন ও উঠতি আমনের ক্ষেত। বিভিন্ন স্থানে বানের পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘর-বাড়ি। পানিতে ভাসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। সরকারিভাবে শুকনো খাবার দিলেও পাচ্ছে না প্রকৃতবানবাসী মানুষ, ত্রাণের জন্য কন্ট্রোল রুম খুললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, গতকাল শনিবার পর্যন্ত নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন মিলে আট হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এক কেজি মুড়ি, এক কেজি চিড়া, আধা কেজি গুড়, এক লিটার পানি। এ ছাড়াও একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ কম্বল বিতরণ করেছে বলেও পিআইও জানান।

তবে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান বলেন, আগামীকাল সোমবারের ভেতর কমবে সব নদীর পানি, উন্নতি হবে বন্যা পরিস্থিতির।

জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯শ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

=========


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর