নাইট গার্ড আফিল উদ্দিনকে হত্যা করে ‘পুলক‘
রাজধানীর দক্ষিণখানের তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়াকে (৫৭) হত্যার ঘটনায় পুলককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এস এম ওয়াহিদ হোসেন ওরফে পুলক নামের এই যুবক হতে চেয়েছিলেন সিরিয়াল কিলার। এছাড়া ঢাকার ডন হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার।
ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে এস এম ওয়াহিদ হোসেন পুলক। এরপর থেকে চাচাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। এসএসসি পাসের পর পড়াশোনাতেও এগোতে পারেনি সে। এক পর্যায়ে ঠাঁই হয় রাজধানীর দক্ষিণখানে তার মামার বাসায়। এখানে এসেও বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীর হাতে চড়-থাপ্পড় খেতে হতো তাকে। মনের মধ্যে পুষে রাখা ক্ষোভ দানা বেঁধে একটি বিকৃত ইচ্ছার জন্ম হয় তার। দক্ষিণখানসহ উত্তরা এলাকার ত্রাস সৃষ্টি করতে সিরিয়াল কিলিংয়ের পরিকল্পনা করে সে। তার টার্গেট ছিল ৯টা হত্যা করা। যার প্রথমটি হলো নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়া।
রাজধানীর দক্ষিণখান থানার তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়া হত্যার ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির হাতে গ্রেফতার হয় পুলক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। শুক্রবার (২২ মার্চ) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, তার ভাবনা— সে যদি হত্যা করতে পারে, তাহলে তাকে মানুষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিনবে। একসময় বডিগার্ড থাকবে, মানুষ তার কথায় উঠবে বসবে। অর্থাৎ রসু খাঁ, এরশাদ শিকদারের মতো বড় সন্ত্রাসী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। এমন ইচ্ছার কথা সে তার মাকেও জানিয়েছে।
ডিবি বলছে, বাবা মারা যাওয়ায় পারিবারিকভাবে অবহেলার শিকার পুলক সিরিয়াল কিলিংয়ের পরিকল্পনা করে। সিরিয়াল কিলিংয়ের মিশনে নামা এই তরুণকে তার প্রথম হত্যার পরেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি। নিহত নিরাপত্তাকর্মী বিভিন্ন সময় পুলককে চর থাপ্পড় দিতো। এর প্রতিশোধ নিতেই সে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খোরশেদা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণখানের তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়া (৫৭) মিয়াকে গত ১৮ মার্চ রাতে অজ্ঞাত আসামিরা গভীর রাতে কুপিয়ে হত্যা করে। সেই মামলার তদন্তে নেমে হত্যায় জড়িত পুলককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যার আগে ইয়াবা সেবন করে পুলক। এরপর এসে তাকে হত্যা করে। আর ইয়াবা সেবনের বিষয় পুলক আমাদের বলেছে— ইয়াবা সেবন করলে যে পিনিক হয়, মানুষ হত্যা করে তার চেয়ে বেশি পিনিক পেয়েছি। আসলে তার ডন হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করায় তার এই স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেলো!
গ্রেফতার পুলক পুলিশের কাছে হত্যার বিষয় নিজের দায় স্বীকার করেছে বলেও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।