নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা সভা হয়েছে

নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদনে ঐক্যবদ্ধ আহসানিয়া ফিশ ডিপো, পারুলিয়া বাজার, দেবহাটা (সাতক্ষীরা) ।
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
ইউরোপীয় ইউনিয়নের RASFF সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে চিংড়িতে নিষিদ্ধ রাসায়নিকের ব্যবহার প্রতিরোধ ও নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদন নিশ্চিত করতে সোমবার সকাল ১০টায় দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া বাজারে আহসানিয়া ফিশ ডিপো প্রাঙ্গণে “গুড অ্যাকুয়াকালচার প্র্যাকটিস (GAP) বিষয়ক সচেতনতা সভা” অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে উপজেলা মৎস্য দপ্তর, দেবহাটা, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (FIQC), খুলনা, এবং ইন্টারন্যাশনাল শ্রিম্প এক্সপোর্টারস (প্রা:) লি., খুলনা।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মোঃ তৌফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পরিচালক, জেলা মৎস্য দপ্তর, সাতক্ষীরা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ. বি. এম. জাকারিয়া, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, FIQC খুলনা, এবং মোঃ মাসুদুর রহমান, পরিদর্শক, FIQC খুলনা।
সভাপতিত্ব করেন মোঃ আবুবকর সিদ্দিক, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার, দেবহাটা, সাতক্ষীরা।
বক্তারা বলেন, “ম্যালাকাইট গ্রিনসহ নিষিদ্ধ রাসায়নিকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে শূন্য সহনীয় (Zero Tolerance)। এইসব উপাদান চিংড়ির মান নষ্ট করে, দেশের রপ্তানি বাজারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।”
আলোচনায় জানানো হয়, বাংলাদেশের চিংড়ি চাষে নিম্নলিখিত রাসায়নিক পদার্থসমূহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও শূন্য সহনীয় (Zero Tolerance):
ম্যালাকাইট গ্রিন (Malachite Green), লিউকো-ম্যালাকাইট গ্রিন (Leuco-Malachite Green), নাইট্রোফিউরান (Nitrofuran) ও এর ডেরিভেটিভ যেমন ফুরাজোলিডোন (Furazolidone) ও নাইট্রোফিউরাজোন (Nitrofurazone), ক্লোরামফেনিকল (Chloramphenicol), মেট্রোনিডাজল (Metronidazole), ক্রিস্টাল ভায়োলেট (Crystal Violet) ও জেন্টিয়ান ভায়োলেট (Gentian Violet)।
বক্তারা জানান, এসব রাসায়নিক ও অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহে ক্যান্সার, লিভার ও কিডনি জটিলতা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি ঘটায়। তাই চাষি, ফিড ব্যবসায়ী ও ডিপো মালিকদের এ উপাদানগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় স্থানীয় চাষি, আড়তদার, ফিড ও ইনপুট ব্যবসায়ী এবং প্রসেসিং কারখানার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তথ্যপত্র ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
বক্তারা আরও বলেন, নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে প্রতিটি ধাপে সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য।
-
চাষ পর্যায়ে: অনুমোদিত ইনপুট, প্রোবায়োটিক ও ওষুধ ব্যবহার, নিয়মিত পানি ও মাটির মান পরীক্ষা, এবং ঘেরের তথ্য সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
-
সংগ্রহ ও বিপণন পর্যায়ে: উৎস যাচাই, মান পরীক্ষা, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
-
প্রসেসিং পর্যায়ে: HACCP নীতিমালা মেনে মান নিয়ন্ত্রণ ও রেসিডিউ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়া, সরকারি পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং, মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা এবং আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বক্তাদের মতে, “উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সততা, সচেতনতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত চিংড়ি ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থা ধরে রাখতে পারবে।”