সাভার উপজেলায় ভোটার শূন্য নির্বাচিনী ক্যাম্প
কয়েক দফায় অনুস্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সারাদেশের প্রতিবারের চেয়ে এবারের ষষ্ঠ দফার নির্বাচন একেবারেই ভোটার শুন্যের কোঠায় চলে আসায় ভোটার উপস্হিতি নেই বললেই চলে, যার কারনে ভোট নিতে আসা দায়িত্বপ্রাপ্তরা তিক্ত বিরক্ত হয়ে শেষ মেষ বকুল ফুলের মালা গাঁথা,ঘুম, মোবাইল চ্যাটিং,লুডুখেলা আর আলাপচারিতায় সময় পার করছেন।
মোঙ্গলবার (২১মে) অনুষ্ঠিত সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার কেন্দ্র ও বুথগুলো ঘুরে বিভিন্ন কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংহভাগ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট, আনসার সদস্য থেকে শুরু করে সকলেই ভোটারদের উপস্থিতি না পেয়ে বকুল ফুলের মালা গাঁথা,লুডু খেলা,গেম খেলা, ঘুম, তন্দ্রা আর বিভিন্ন আলাপচারিতায় সময় পার করতে দেখা যায়।
এমন দৃশ্যের কারন জানতে চাইলে তারা বলেন, ভোটার নেই তাই কোনো ধরনের কাজ না থাকায় এমনভাবেই সময় পার করতে হচ্ছে।
সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো এবারেও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনজুরুল আলম রাজীবের সাথে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় দ্বিতীয় বারের মত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদটিতে নির্বাচন না হওয়ায় ভোটারদের উপস্হিতি একেবারেই নেই বললে চলে এমনটাই সরেজমিনে ভোট কেন্দ্র গিয়ে দেখা যায়। ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটার বিহিন নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তারা হচ্ছেন ১. ইমতিয়াজ উদ্দিন (চশমা), মো: মোশাররফ খান (টিউবওয়েল), মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম (তালা) প্রতীক।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১. ইয়াসমিন আকতার (সুমী) (ফুটবল), নাদিয়া নূর( প্রজাপতি),মোছাঃ মনিকা আক্তার(কলস) প্রতীকে।
সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র গুলো পর্যবেক্ষণে গিয়ে দেখা যায় টেংগুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে মোট দুই হাজার চারশত উনশাট জন পুরুষ ভোটার। ২১৬ নং কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায় সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৪৩৭ জন পুরুষ, এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ২জন ভোটার। এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রিজাইডিং অফিসার মো: রোকন উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার কেন্দ্রে মাত্র ২টি ভোট পরেছে।
২১৭ নং (পুরুষ) কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার মো: সোহেল আহম্মেদ বলেন সাংবাদিকতা আর কি করবেন? সকাল থেকে এ পর্যন্ত ৩টি ভোট পরেছে এ কেন্দ্রে। এতো প্রচার প্রচারনা ক্যাম্পিং করার পরেও ভোটার উপস্থিতি নেই।
২১৮ নং কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার কেন্দ্রে ২,৩৬৭ জন পুরুষ ভোটার। ৭টি বুথে এ পর্যন্ত ৩,৪,৫নং বুথে ১টি ভোটও পরেনি।
২১৯ নং (নারী)কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো: আব্দুল জলিল বলেন, আমার কেন্দ্রে মোট নারী ভোটার সংখ্যা ২,৩৪৭জন, এ কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে সকাল সারে ১০টা পর্যন্ত ৭টি বুথে একজন পোলিং এজেন্ট এ কেন্দ্রের ভোটার ‘সে ভোটটিই পরেছে মাত্র, তাছাড়া কোনো ভোটার এ পর্যন্ত ভোট দিতে আসেনি।
আব্দুল মান্নান কলেজের ২২৩ নং কেন্দ্রে মোট নারী ভোটার সংখ্যা ৩,৫৩১ জন, এর মধ্যে সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ১টি ভোটও পরেনি বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসার ডা. মো: নেয়ামুল শাহাদাত। তবে এ কেন্দ্রটির ভিতরেই সকাল ৮টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত কোনো ধরনের ভোটার উপস্থিতি না থাকায় ভোট নিতে আসা এক নারী সদস্যকে বকুল ফুলের মালা গেঁথে সময় পার করতে দেখা যায় আর পাশে দাঁড়িয়ে মালা গাঁথা দেখছেন ২জন পুলিং অফিসার।
মো. মাইদুল নামে অপর আনসার সদস্য জানান, এ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এমন ফাঁকা ভোটকেন্দ্র কখনও দেখিনি। এবারের নির্বাচন একটি রেকর্ড হয়ে থাকবে।ভোট দিতে ঘুরতে আসা ভোটার নিজামুদ্দিন বলেন, আমি এ কেন্দ্রে আধা ঘন্টা আগে এসেছি ভোট দিতে, কিন্তু কোনো ভোটারকে ভোট দিতে দেখছিনা এমনটা দেখে আমিও ভোট দিচ্ছি না, তবে যেহেতু আমার পছন্দের প্রার্থী চশমা মার্কার ইমতিয়াজ উদ্দিন ভাই আমি তাকেই ভোট দিয়ে চলে যাবো
এই কেন্দ্রে চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্ট মো. জুয়েল বলেন, সকাল থেকেই ভোটারের আশায় বসে আছি কিন্তু তাদেরই দেখা নেই।
সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ্র রায় নজর বিডি ডট কম কে বলেন, এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে যিনি ছিলেন তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়াও ভোটারদের আগ্রহ খুবই কম। আর সেজন্যই ভোটার উপস্থিতি বলতে একেবারে শূন্য।